১.
সমাজে ব্যক্তির স্বাধীনতার অধিকার ও মর্যাদাতে কোন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ সমর্থনযোগ্য নয়- এই হচ্ছে উদারবাদ,উদারনীতিবাদ বা Liberalism এর মূল দর্শন। রাষ্ট্র, সমাজ ও অর্থনীতি ক্ষেত্রে বিভিন্ন দার্শনিক বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে উদারনীতিবাদকে ব্যাখ্যা করেছেন বা করে থাকেন,কিন্তু এর মূল যে দর্শন: মানুষের ব্যক্তি-স্বাধীনতা,গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ,সহনশীলতা,মুক্তবাজার অর্থনীতি,রাষ্ট্রের ক্রমহ্রাসমান হস্তক্ষেপ(Minimal State) এর উপরেই দাঁড়িয়েই তারা কথা বলেন বা তর্ক-বিতর্ক করেন।মূলত উদারবাদীরা ব্যক্তির নিজ ক্ষমতা ও বিকাশের উপর ভিত্তি করেই গড়ে তোলেন তাদের মতবাদ। উদারবাদের একজন কট্টর প্রবর্তক জন স্টুয়ার্ট মিলের ভাষায়,’Over himself,over his own body,and mind,the individual is sovereign’ এবং এই সার্বভৌম ব্যক্তির স্বাধীনতার উপর যে কোন হস্তক্ষেপেই উদারবাদীদের যত আপত্তি; উদারবাদীরা হচ্ছে নিরঙ্কুশ ব্যক্তি-স্বাতন্ত্রবাদী।
এই যে ব্যক্তি-স্বাতন্ত্রবাদ,মূলত এর উপর ভিত্তি করেই গড়ে ওঠে আধুনিক পুঁজিবাদী রাষ্ট্র;যাকে বর্তমানে বলা হয় ‘লিবারেল ডেমোক্রেটিক স্টেট’.(Liberalism as the theory and practice of individual liberty,juridical defense and the constitutional state-Sabine) এই নীতির উপর দাঁড়িয়েই তৈরি হয় পুঁজিবাদী অর্থনীতির বুনিয়াদ এবং সামাজিক কাঠামো। সামন্তবাদী যত অনগ্রসর চিন্তা-ভাবনা,সংস্কার,বিশ্বাস,অর্থনৈতিক কাঠামো,পোপতন্ত্র বা নিরঙ্কুশ রাজতন্ত্র তার সবকিছু ধ্বংস করেই তৈরি হয়েছে আজকের উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র;যেখানে সরকারের ক্ষমতার উৎস হচ্ছে জনগণ এবং জনসাধারণের সম্মতিই রাষ্ট্রের ভিত্তি।
সমাজে ব্যক্তির স্বাধীনতার অধিকার ও মর্যাদাতে কোন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ সমর্থনযোগ্য নয়- এই হচ্ছে উদারবাদ,উদারনীতিবাদ বা Liberalism এর মূল দর্শন। রাষ্ট্র, সমাজ ও অর্থনীতি ক্ষেত্রে বিভিন্ন দার্শনিক বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে উদারনীতিবাদকে ব্যাখ্যা করেছেন বা করে থাকেন,কিন্তু এর মূল যে দর্শন: মানুষের ব্যক্তি-স্বাধীনতা,গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ,সহনশীলতা,মুক্তবাজার অর্থনীতি,রাষ্ট্রের ক্রমহ্রাসমান হস্তক্ষেপ(Minimal State) এর উপরেই দাঁড়িয়েই তারা কথা বলেন বা তর্ক-বিতর্ক করেন।মূলত উদারবাদীরা ব্যক্তির নিজ ক্ষমতা ও বিকাশের উপর ভিত্তি করেই গড়ে তোলেন তাদের মতবাদ। উদারবাদের একজন কট্টর প্রবর্তক জন স্টুয়ার্ট মিলের ভাষায়,’Over himself,over his own body,and mind,the individual is sovereign’ এবং এই সার্বভৌম ব্যক্তির স্বাধীনতার উপর যে কোন হস্তক্ষেপেই উদারবাদীদের যত আপত্তি; উদারবাদীরা হচ্ছে নিরঙ্কুশ ব্যক্তি-স্বাতন্ত্রবাদী।
এই যে ব্যক্তি-স্বাতন্ত্রবাদ,মূলত এর উপর ভিত্তি করেই গড়ে ওঠে আধুনিক পুঁজিবাদী রাষ্ট্র;যাকে বর্তমানে বলা হয় ‘লিবারেল ডেমোক্রেটিক স্টেট’.(Liberalism as the theory and practice of individual liberty,juridical defense and the constitutional state-Sabine) এই নীতির উপর দাঁড়িয়েই তৈরি হয় পুঁজিবাদী অর্থনীতির বুনিয়াদ এবং সামাজিক কাঠামো। সামন্তবাদী যত অনগ্রসর চিন্তা-ভাবনা,সংস্কার,বিশ্বাস,অর্থনৈতিক কাঠামো,পোপতন্ত্র বা নিরঙ্কুশ রাজতন্ত্র তার সবকিছু ধ্বংস করেই তৈরি হয়েছে আজকের উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র;যেখানে সরকারের ক্ষমতার উৎস হচ্ছে জনগণ এবং জনসাধারণের সম্মতিই রাষ্ট্রের ভিত্তি।

২.
আর এই মতবাদের যিনি মূল প্রবক্তা তাঁর নাম জন লক।তাকে উদারবাদের জনক বললে মোটেও অত্যুক্তি হবে না।কেননা ব্যক্তি-স্বাতন্ত্রবাদী রাষ্ট্র গঠনের পথের শুরু তাঁর হাত দিয়েই। তিনিই প্রথম ঘোষণা করলেন মানুষের প্রাকৃতিক অধিকারসমূহের কথা; বললেন জীবন,স্বাধীনতা ও সম্পত্তির অধিকারের কথা,যেখানে কোনভাবেই হস্তক্ষেপ নৈতিকভাবে সমর্থনযোগ্য নয়।যে কারনে তাকে অনিবার্যভাবেই গুরুত্ব দিতে হলো ব্যক্তি-স্বাধীনতার সাংবিধানিক নিশ্চয়তার উপর;বলতে হলো নিয়ন্ত্রিত সরকারের কথা।
পরবর্তীতে রাষ্ট্রকে উদারনীতিকরণে আরেক ধাপ এগিয়ে দিলেন অর্থনীতিবিদ অ্যাডাম স্মিথ। তিনি উদারবাদী রাষ্ট্র গঠনের জন্য সাংবিধানিক সরকার তো বটেই,সেই সাথে জোর দিলেন মুক্ত বাজার অর্থনীতির উপর। ব্যক্তির জন্য তিনি চালু করলেন laissez-faire বা অবাধ বাজার নীতি। ডেভিড রিকার্ডো,জেরেমি বেন্থাম এই বিষয়ে আরো কয়েকধাপ এগিয়ে এলেন অবাধ আন্তর্জাতিক বাণিজ্য আর উপযোগবাদী ধারনা নিয়ে। অন্যদিকে হার্বাট স্পেন্সার The Man versus the State এ রাষ্ট্রের কর্তৃত্বকে অস্বীকার করে তুলে ধরলেন ব্যক্তির নিরঙ্কুশ ক্ষমতাকে।
ব্যক্তি-স্বাধীনতার প্রশ্নে জন স্টুয়ার্ট মিলেরও কোন আপস ছিলো না। তিনি তাঁর গুরু বেন্থামকে অনুসরন করে গড়ে তুললেন রাষ্ট্র সম্পর্কিত তাঁর মতবাদসমূহ। প্রতিনিধিত্বমূলক শাসনব্যবস্থা,সার্বজনীন ভোটাধিকার,জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ-এই হচ্ছে রাষ্ট্রের সুশাসনের ভিত্তি যা নিশ্চিত করতে রাষ্ট্রে অবস্থিত ব্যক্তির চাহিদা এবং সহ্য করতে পারে ভিন্ন মতামত। মিলের পর টি.এইচ.গ্রিন,হবহাউস,বোসানকুয়েট এবং আরো অনেক লিবারেল রাষ্ট্রবিজ্ঞানী গড়ে তোলেন আধুনিক Welfare State বা কল্যাণমূলক উদারবাদী রাষ্ট্রের তত্ত্ব । বর্তমান সময়ে দুজন শক্তিশালী উদারনৈতিক রাষ্ট্র দার্শনিকের হলেন জন রাউলস(John Rawls) এবং রবার্ট নোজিক(Nozick)। অন্যদিকে রাষ্ট্র দার্শনিক নয় কিন্তু সমাজদর্শনে যার প্রভাব অপরিসীম; যিনি ব্যক্তির উপর রাষ্ট্রের বল প্রয়োগোর বিরুদ্ধে তো বটেই,তিনি বলতে চান রাষ্ট্রের অস্তিত্বেরও বিরুদ্ধে; হার্বাট স্পেন্সারের মতোই নৈরাজ্যবাদী ব্যক্তিপূজারী দার্শনিকের নাম মিশেল ফুকো।
৩.
এই যে উদারনৈতিক পুঁজিবাদী রাষ্ট্রের কাঠামো তৈরি হলো(যুক্তরাজ্য,যুক্তরাষ্ট্র,জার্মানি,ফ্রান্স..),এই রাষ্ট্রব্যবস্থার মূল বৈশিষ্ট্যগুলো কি? এককথায় বলতে গেলে ব্যক্তির স্বায়ত্ত্বশাসন,সবার জন্য সমান সুযোগ,প্রাকৃতিক অধিকার(জীবন,স্বাধীনতা,সম্পত্তি),ন্যূনতম সরকার ব্যবস্থা (minimal state),অবাধ বাণিজ্য এবং মুক্তবাজার অর্থনীতি,আইনের শাসন,সামাজিক পরিবর্তন এবং সামাজিক নিরাপত্তা ইত্যাদিই আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের প্রধান মৌল বিষয় যা নিশ্চিত করতে পারে ব্যক্তি-স্বাতন্ত্র্যতা।
আর এই উদারনৈতিক ব্যবস্থার অভিব্যক্তি দেখি সামাজিক,অর্থনীতি এবং রাষ্ট্রিক ক্ষেত্রে। সামাজিক ক্ষেত্রে এর প্রকাশ মানুষে মানুষে ভেদাভেদহীতা,কুসংস্কার,গোঁড়ামি বৈষম্য ও কর্তৃত্ববাদের বিরুদ্ধতা,মুক্তচিন্তার প্রসার,নারী স্বাধীনতা;রাজনীতির ক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রসার ,অর্থনীতির ক্ষেত্রে মুক্তবাজার নীতি এবং ধর্মের ক্ষেত্রেও দেখি সহনশীলতা। উদারনৈতিক সমাজ এমন একটি রাষ্ট্রব্যবস্থার প্রতি আস্থাশীল বা বিশ্বাসী যেখানে থাকবে হাজার রকমের মানুষের হাজার রকম মতবাদ;যেখানে বিজ্ঞানের আধিপত্য সর্বময়;যে সমাজে মূল্য দেয়া হয় জ্ঞানকে এবং উৎসাহিত করা হয় নতুন জ্ঞান সৃষ্টিতেও।
ব্যক্তিকেন্দ্রিক এবং ব্যক্তির প্রজ্ঞা ও চিন্তাচেতনার প্রতি গুরুত্ব দিয়ে রাষ্ট্রের গুরুত্বকে অস্বীকার করে এই যে উদারনৈতিক রাষ্ট্রব্যবস্থা,এর ত্রুটি যে কম তা নয়। কিন্তু এর সমস্যাগুলো নিয়ে আলোচনা করতে গেলে চলে আসে মার্কসবাদ এবং সমাজতান্ত্রিক ধারনাগুলো। কেননা মার্কসবাদ নিয়ে আলোচনা করার শুরুতেই উদারবাদকে আক্রমণ করেই শুরু করতে হয় এবং পরবর্তীতে তাই করা হবে।
(কেউ চাইলে লাস্কির এই বইটা দেখতে পারেন,H.J.Laski-The rise of European Liberalism)

Comments
Post a Comment